
কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী শরিফুল হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক
বেলাল আহমদ,লামা-বান্দরবান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন বান্দরবানের লামা কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যে নতুন আরেকটি মাইলফলক রচনা করেছেন তিনি।
বাবার হাত ধরে ২০০৩ সালে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে কোয়ান্টাম শিশুকাননে ভর্তি হন শরিফুল। ২০১৩ সালে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৫ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫-১৬ সেশনে ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন তিনি। অনার্সে তিনি তার বিভাগে ফার্স্ট ক্লাস থার্ড হন এবং মাস্টার্স হন ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট।
কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজে খো খো খেলার পথচলা শুরু হয় শরিফুলের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে। ২০০৯ সালে এ খেলায় তার দল প্রথমবারের মতো অর্জন করে জাতীয় পদক।শরিফুল ইসলাম ২নং লামা সদর ইউনিয়নের বলিয়ার চর গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও জান্নাত আরা বেগম এর ২য় সন্তান,৫ ভাইবোনের মধ্যে শরিফুল ২য়।
কোয়ান্টামের যাত্রাশুরুর দিনগুলিতে সীমিত সুযোগ-সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সাফল্যযাত্রায় কখনও পিছপা হন নি শরিফুল। কলেজে তাদের ব্যাচ দিয়েই শুরু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি। সে-সময়ে যে ক্লাসরুমে বসে তিনি ও তার সহপাঠীরা প্রস্তুতি নিতেন, সেখানে কোনো পাকা মেঝে ছিল না। তারা ইট বিছিয়ে কক্ষটিকে লেখাপড়ার উপযোগী করে নিয়েছিলেন। এসবের মধ্য দিয়ে তিনি অর্জন করেছেন নেতৃত্বের গুণ ও শ্রম-সহিষ্ণুতা। এ ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পালন করেছেন ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভের দায়িত্ব।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন শরিফুল খেলাধুলার ওপর বই লেখেন-‘খো খো খেলার আদ্যোপান্ত’ (২০২১)।
প্রসঙ্গত, এই খেলার ওপর বাংলা ভাষায় রচিত আধুনিক নিয়মকানুন সম্বলিত এটিই পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। এরপর আরো লেখেন ‘ওয়ার্ম আপ স্ট্রেচিং ও কুল ডাউন’ (২০২৩), ‘পিটি ও ড্রিল’ (২০২৪) এবং ‘প্যারেড’ (২০২৫) বইসমূহ। তার সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা দুটি-‘অদম্য’ ও ‘সব সম্ভব’। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সাময়িকী জার্নাল অব বায়োমেড রিসার্চ-এ তার লেখা একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
স্কুলজীবন থেকেই তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন কোয়ান্টামের সেবামূলক কাজে। করোনাকালে দায়িত্ব পালন করেন কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা দাফন টিমের একজন সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত ‘সব সম্ভব’ বইয়ে শত তরুণের জীবন জয়ের গল্পের একটি কোয়ান্টা শরিফুল ইসলামকে নিয়ে। এতে শরিফুল লিখেছেন, ‘কোয়ান্টাম আমাকে শিখিয়েছে-সব সম্ভব। আমার সবচেয়ে বড় শিক্ষা যদি বলতে হয় তা হলো, এখানে আমি জীবনযাপনের ব্যাকরণ ও একটি শুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গির সন্ধান পেয়েছি।’ বিস্তারিত পড়ুন-কোয়ান্টাম আমাকে শিখিয়েছে ‘সব সম্ভব’
এই ধারাবাহিকতায় আরেকটি উল্লেখযোগ্য ধাপ হিসেবে সদাবিনয়ী শরিফুল ইসলাম যোগ দিয়েছেন তার প্রিয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজের ও মানুষের কল্যাণে তিনি মেধাকে সেবায় রূপান্তরিত করার পথে এগিয়ে যাবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।